এই বড় ইতিহাসের শেষাংশে এসে চতুর্থ খণ্ডের বিষয় মার্চ ১৯৭১ থেকে ডিসেম্বর ১৯৭২। কেন এই দেড় বছর এতখানি গুরুত্ব পায়, ভূমিকায় এবং প্রবন্ধগুলিতে সেটা ভাল ভাবেই প্রতিষ্ঠিত। শামসুজ্জামান খান যেমন স্পষ্ট বলেছেন, বাঙালি আসলে ভারতের একটি প্রান্তিক জনবসতি, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ধারার সমন্বয়ে তৈরি হলেও সেই সব ধারার মূলস্রোত থেকে আলাদা তার নিজস্ব আইডেন্টিটি। আর, স্বতন্ত্রতা-ঋদ্ধ এই বাঙালি জাতির রাজনৈতিক আত্মপ্রতিষ্ঠার সময়টি হল ১৯৭১। পশ্চিমবঙ্গে বসে আমরা নিশ্চয়ই ব্যাপারটা এ ভাবে ভাবি না। কিন্তু মানতেই হবে, মুসলিমপ্রধান পূর্ব বাংলার দৃষ্টি থেকে কথাটির তাৎপর্য যথেষ্ট। সাতচল্লিশ সালের পনেরোই অগস্ট যতই যুগান্তকারী হোক, বাংলার ইতিহাসে সেই মুহূর্তটির গুরুত্ব নেহাতই ক্ষণস্থায়ী এবং খণ্ডিত। বাংলার ইতিহাস, আরও ঠিক করে বলতে গেলে, বাঙালির ইতিহাস ১৯৭১ সালে এসে একটা অর্থময়তা পেল, যদিও তার খণ্ডিত রূপটি ঘুচল না।
তাই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এ বাংলায় পত্রপত্রিকা কী লিখছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি তৈরি হয়েছিল, কী ছিল তাদের লক্ষ্য, কী ভাবে তাদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ত্রাণের কাজ চলত, কিংবা বাঙালি নৌবাহিনীর ভূমিকা, বাঙালি ছেলেদের গেরিলা কর্মপদ্ধতি, এ সব মিলেই বাঙালির ইতিহাসের একটা বড় ছবির নির্মাণ। এত দিন অবধি এই সব ছিল শোনা কাহিনি, কিংবা প্রকাশিত সংবাদ— সুসংবদ্ধ ইতিহাস নয়, কেননা সেগুলি কোনও বড় বিশ্লেষণী কাঠামোয় জায়গা পায়নি। এই খণ্ডগুলির দৌলতে সেই জানাশোনা কাহিনির একটা ইতিহাস পাওয়া গেল, বাঙালি আইডেন্টিটির ক্রমবিবর্তনের অধ্যায় হিসেবে।
বাঙালি আইডেন্টিটির স্ফুরণ বিষয়ে অন্যরা কী ভাবছিল তখন? মায়ানমার, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অনেকগুলো দেশের দৃষ্টিকোণ মেলে বিভিন্ন লেখায়। পশ্চিম পাকিস্তানেরও। পূর্ব পাকিস্তানের ‘গণহত্যা’ বিষয়ে সেখানে সচেতনতা ছিল না বললেই চলে। তুলনায় যাঁরা প্রগতিশীল, তাঁরাও মনে করতেন শেখ মুজিব অতীব বিপজ্জনক, তাঁর ছয় দফা দাবি সমূলে পরিত্যাজ্য, কেননা সেই ছয় দফা দাবি মেনে নিলে পূর্ব পাকিস্তান কেন, সিন্ধু বা বালুচিস্তানের মতো জায়গাও স্বশাসনের ধুয়োটি জোরালো করার অবকাশ পেয়ে যাবে। মানবিকতার প্রশ্ন তো আর পাকিস্তানের সার্বভৌমতার প্রশ্নের চেয়ে বড় হতে পারে না! মুনতাসির মামুনের এই লেখায় অবশ্য ব্যতিক্রমেরও হদিশ: পরের প্রজন্মের মনে সরকারি ইতিহাস পড়ার পরও কী ধরনের প্রশ্নের ভিড় জমে, তার আভাস।
চতুর্থ খণ্ডের প্রতিটি পর্ব প্রায় চারশো পাতার বই। প্রতিটি বই হাতে নিয়ে মনে হয়, এত বড় পরিসরে, বড় আঙ্গিকে বাঙালির ইতিহাস লেখার চেষ্টা করতে এখন ঢাকার বাংলা একাডেমীই পারে।
DOWNLOAD THE BOOKS
তাই মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এ বাংলায় পত্রপত্রিকা কী লিখছিল, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে বাংলাদেশ সহায়ক কমিটি তৈরি হয়েছিল, কী ছিল তাদের লক্ষ্য, কী ভাবে তাদের সংগৃহীত অর্থ দিয়ে ত্রাণের কাজ চলত, কিংবা বাঙালি নৌবাহিনীর ভূমিকা, বাঙালি ছেলেদের গেরিলা কর্মপদ্ধতি, এ সব মিলেই বাঙালির ইতিহাসের একটা বড় ছবির নির্মাণ। এত দিন অবধি এই সব ছিল শোনা কাহিনি, কিংবা প্রকাশিত সংবাদ— সুসংবদ্ধ ইতিহাস নয়, কেননা সেগুলি কোনও বড় বিশ্লেষণী কাঠামোয় জায়গা পায়নি। এই খণ্ডগুলির দৌলতে সেই জানাশোনা কাহিনির একটা ইতিহাস পাওয়া গেল, বাঙালি আইডেন্টিটির ক্রমবিবর্তনের অধ্যায় হিসেবে।
বাঙালি আইডেন্টিটির স্ফুরণ বিষয়ে অন্যরা কী ভাবছিল তখন? মায়ানমার, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অনেকগুলো দেশের দৃষ্টিকোণ মেলে বিভিন্ন লেখায়। পশ্চিম পাকিস্তানেরও। পূর্ব পাকিস্তানের ‘গণহত্যা’ বিষয়ে সেখানে সচেতনতা ছিল না বললেই চলে। তুলনায় যাঁরা প্রগতিশীল, তাঁরাও মনে করতেন শেখ মুজিব অতীব বিপজ্জনক, তাঁর ছয় দফা দাবি সমূলে পরিত্যাজ্য, কেননা সেই ছয় দফা দাবি মেনে নিলে পূর্ব পাকিস্তান কেন, সিন্ধু বা বালুচিস্তানের মতো জায়গাও স্বশাসনের ধুয়োটি জোরালো করার অবকাশ পেয়ে যাবে। মানবিকতার প্রশ্ন তো আর পাকিস্তানের সার্বভৌমতার প্রশ্নের চেয়ে বড় হতে পারে না! মুনতাসির মামুনের এই লেখায় অবশ্য ব্যতিক্রমেরও হদিশ: পরের প্রজন্মের মনে সরকারি ইতিহাস পড়ার পরও কী ধরনের প্রশ্নের ভিড় জমে, তার আভাস।
চতুর্থ খণ্ডের প্রতিটি পর্ব প্রায় চারশো পাতার বই। প্রতিটি বই হাতে নিয়ে মনে হয়, এত বড় পরিসরে, বড় আঙ্গিকে বাঙালির ইতিহাস লেখার চেষ্টা করতে এখন ঢাকার বাংলা একাডেমীই পারে।
0 comments:
Post a Comment